বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ সম্প্রতি বলেছেন যে সমবায় ব্যাংকের ১২,০০০ ভরি সোনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর এই বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
রোববার কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ব্যাংকের সোনা কীভাবে গায়েব হলো, তা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের মতে, এই ঘটনা তিন বছর আগে ঘটে, যখন প্রায় ৮,০০০ ভরি সোনা কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ভুয়া গ্রাহকরা তুলে নেয়।
পরে দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে মামলা দায়ের করে, যা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসানুল গনি জানিয়েছেন যে ওই ঘটনায় ব্যাংকের একটি চক্র জড়িত ছিল এবং তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
“ঘটনাটি সত্যি। ব্যাংকের কিছু কর্মচারী এতে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে,” তিনি উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, সমবায় ব্যাংক মূলত একটি বিশেষায়িত ব্যাংক, যা সমবায় আইনের আওতায় সমবায় খাতে অর্থ সরবরাহ করে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঋণও দিতে পারে।
উপদেষ্টা কী বলেছেন?
কুমিল্লায় বার্ডের অনুষ্ঠানে গিয়ে এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, সমবায় ব্যাংকের বহু সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। তিনি জানান, যারা একসময় ব্যাংকে ছিলেন, তারাই এসব সম্পত্তি বেদখল করে রেখেছে।
“আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানতে পারলাম, ১২,০০০ ভরি সোনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে,” বলেন তিনি।
তার এই বক্তব্যের পর বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এবং নতুন তথ্য মনে করে অনেকেই এ নিয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন।
পরে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা নিশ্চিত করেন যে, এই ঘটনা ২০২০ সালের এবং এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যাংকের আটজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করেছে, যা এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
কীভাবে গায়েব হলো এতো সোনা
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন এই ঘটনা প্রকাশ পায়, তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুদককে অবহিত করে এবং তদন্ত শুরু হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের পর, তখনকার চেয়ারম্যানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থার একজন উপ-পরিচালক। এরপর পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, এসব ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে ২,৩১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা ৭,৩৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে, যার বাজার মূল্য ছিল ৪০ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ টাকা।
এর মধ্যে, ভুয়া গ্রাহক সৃষ্টি করে প্রায় সাড়ে এগারো কোটি টাকার সোনা তারা আত্মসাৎ করেন। এই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির সদস্যরা মোট প্রায় ১২,০০০ ভরি সোনা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করেছিল। এক পর্যায়ে ওই সমবায় সমিতি দেউলিয়া হয়ে যায়। করোনা মহামারির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। সবমিলিয়ে, যথাসময়ে ঋণ শোধ না করায় ব্যাংক সেই সোনা নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
শেয়ার করুন
0 coment rios: