Saturday, October 5, 2024

প্রথম রাত তাই চিৎকার করতে পারিনি....

ctn daili news

 



সময় রাত ২টা ৪৫ মিনিট। ডিউটি ডাক্তার সবে মাত্র বিশ্রাম নিতে গিয়ে চোখে ঘুম নিয়ে বিছানায় শুয়েছেন। হঠাৎ ইমারজেন্সি থেকে কল এলো। ক্লান্ত চোখে ইমারজেন্সিতে গিয়ে যা দেখলেন, তাতে হতবাক হওয়ার মতো অবস্থা। এক মহিলা রোগী, যার পরনের চাদর রক্তে ভেজা। মুখ ফ্যাকাসে, সাদা। দেখে বোঝা যায়, নতুন বিয়ে হয়েছে।


রোগীর নাম ফুলি (ছদ্ম নাম)। হিষ্ট্রি নেওয়ার জন্য ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন, "কি হয়েছে?" সঙ্গে সদ্য বিবাহিত স্বামী, জা এবং আরও ৪/৫ জন লোক এসেছে। ডাক্তারের প্রশ্ন শুনেই স্বামী চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রোগীর সাথে আসা এক মহিলা রাগের সাথে বলল, "ডাক্তার হইছেন, বুঝেন না নাকি! সব কি আর বলতে হবে?"


ওদের গ্রামে গাছের মাথায় বাঁধা মাইকে বিয়ের গান বাজছিল একটার পর একটা। বিয়ে বাড়িতে সবাই ব্যস্ত, আর বরপক্ষ নিজেদের অভিজাত দেখানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। যৌতুক হিসেবে যা পাওয়া গেছে, তা নেহাতই কম নয়। তবে কনের বয়স ছিল খুব কম। মাত্র ১৪ পেরিয়ে ১৫তে পড়েছে ফুলি বেগম। মেয়ের বাবা লাল শাড়ি পরিয়ে বিদায় দিতে পেরে খুশি—মেয়ে হলে বিদায় দিতে তো হবেই। মেয়েকে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ানো হয়েছে, তাও তো কম না! ছেলেও নাকি ভালো, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।


বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফুলিকে তার নতুন ঘরে আনা হলো। যে মেয়েটি জীবনের অর্থ বুঝতে শুরু করেছে, শৈশব থেকে কৈশোরে পা রেখেছে, সে কিছু বোঝার আগেই আজ তার বাসর রাত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সতীত্ব যাচাইয়ের এক নির্মম উৎসব। বিয়ে শুধু সামাজিক বৈধতা পেতে হলেও, ফুলির মতামত নেওয়া হয়নি। পরিবারের চাপের মুখে এই বিয়ে। এ ধরনের বিয়ে আদতে একটি ধর্ষণের শামিল। ফুলি চিৎকার করতে চেয়েছিল, কিন্তু বাসর ঘরে চিৎকার করা যে উচিত নয়, তা সে জানে। সে হাত পা ছুঁড়ে বরের লালসার আগ্রাসন থেকে মুক্তির বৃথা চেষ্টা করছিল।


যখন সমাজ অনুমোদিত 'বর' তার আদিম প্রবৃত্তি থেকে বাস্তবে ফিরে এলো, তখন ফুলি রক্তে ভেজা। রক্তের ফিনকি তখনও থামেনি। ফুলির মুখ ক্রমশ সাদা হয়ে আসছিল। এখন সে হাসপাতালের বেডে অচেতন হয়ে শুয়ে আছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়, ফুলির চোখ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দিকে পড়েছিল, যারা কানাকানি করে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হাসছিল।


শেয়ার করুন

0 coment rios: