Sunday, October 6, 2024

বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধারীরা বিনা ভিসায় যেতে পারবে যে সকল দেশে...

ctn daily news


বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা সংস্থা 'দ্য হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স' এর প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের শক্তি মূল্যায়ন করে এই তালিকা প্রকাশ করে। ২০২০ সালের র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে ৯৮তম অবস্থানে এসেছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ এই তালিকায় ছিল ৬৮তম স্থানে, তবে এরপর ক্রমান্বয়ে অবনতি হয়, ২০১৮ সালে এটি ১০০তম অবস্থানে নেমে আসে, আর ২০১৯ সালে ছিল ৯৯তম স্থানে।


একটি দেশের পাসপোর্ট দিয়ে কতটি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করা যায়, সেই ভিত্তিতে এই র‌্যাংকিং তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হলেও, বাংলাদেশিদের জন্য ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা প্রাপ্ত দেশের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ৪১টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। এর মধ্যে এশিয়ার ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব তিমুর উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আফ্রিকার ১৬টি, ওশেনিয়ার ৭টি এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১২টি দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা রয়েছে।


সম্প্রতি বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ই-পাসপোর্টের প্রবর্তন বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। বিদেশে ভ্রমণের সময় বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও আরও সহজ হবে।


সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, পাসপোর্টের মাধ্যমে আসলে পরোক্ষভাবে একজন নাগরিকের মূল্যায়ন করা হয়। এই র‌্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আপনার দেশ এবং পাসপোর্ট সম্পর্কে অন্যান্য দেশের মূল্যায়ন কেমন। পাসপোর্টের র‌্যাংকিং শুধু দেশের অর্থনীতি নয়, শাসন ব্যবস্থা এবং দেশের মানুষের সার্বিক অবস্থার প্রতিফলন হিসেবেও গণ্য করা হয়।


তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে পাসপোর্টের মান নির্ধারণ করা হয়। কোনো পাসপোর্টের মূল্য কতটা বেশি বা কম তা নির্ভর করে সেই পাসপোর্টের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্রিটিশ বা আমেরিকান পাসপোর্ট জাল করা অত্যন্ত কঠিন, যেখানে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট জাল করা সহজ। যে দেশগুলোর পাসপোর্টের মূল্য বেশি, ধারণা করা হয় যে সেসব দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী, অর্থনীতি সমৃদ্ধ এবং শাসনব্যবস্থা মজবুত। সেই দেশগুলোর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, পাসপোর্টের র‌্যাংকিংয়ে উপরের দিকে থাকা দেশের নাগরিকেরা ভিসার জন্য আবেদন করলে তুলনামূলক ভালো ব্যবহার পেয়ে থাকেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ভিসা প্রাপ্তি প্রক্রিয়া সহজ হয়। অন্যদিকে, র‌্যাংকিংয়ে নিচের দিকে থাকা পাসপোর্টধারীদের জন্য দূতাবাসগুলো প্রায়শই অতিরিক্ত তথ্য চায় এবং ভিসা আবেদন নাকচ করার প্রবণতাও বেশি থাকে।


দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাসপোর্টের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ, যার অবস্থান ৬১তম। মালদ্বীপের পাসপোর্ট দিয়ে ৮৫টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায়। এই অঞ্চলে মালদ্বীপের পরে ভারতের পাসপোর্ট রয়েছে ৮৪তম অবস্থানে, যার মাধ্যমে ৫৮টি দেশে ভিসাবিহীন প্রবেশ করা সম্ভব। শ্রীলংকা ৯৭তম, নেপাল ১০১তম এবং পাকিস্তান ১০৪তম স্থানে রয়েছে।


এই র‌্যাংকিংয়ে মোট ১০৭টি দেশের পাসপোর্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে জাপান, যার পাসপোর্টধারীরা ১৯১টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৯০। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, যাদের পাসপোর্টে ১৯০টি দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা রয়েছে। তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্ট, যা ১৮৯টি দেশে ভিসাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ দেয়। শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় পরবর্তী ১৩টি দেশ ইউরোপের।


দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে জার্মানির পাসপোর্ট, যা ১৮৯টি দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা দেয়। চতুর্থ স্থানে আছে ইতালি ও ফিনল্যান্ড। পঞ্চম স্থানে রয়েছে স্পেন, লুক্সেমবুর্গ ও ডেনমার্কের পাসপোর্ট। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে সুইডেন ও ফ্রান্স। এরপরের অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসহ ৫টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে, তাদের পাসপোর্টে ১৮৪টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ আছে।

শেয়ার করুন

0 coment rios: