চাঁদপুরে শুক্রবার পুরো দিনে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই দিনে উত্তরের ব্রহ্মপুত্র থেকে পদ্মা অববাহিকার অন্তত ১১টি জেলায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতেও বর্ষার শেষ সময়ে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, তিন দিন ধরে দেশের বিস্তৃত এলাকায় এত প্রবল বৃষ্টি হওয়াটা বিরল। এর প্রধান কারণ হিসেবে তাঁরা অস্বাভাবিক শক্তিশালী পুবালি বাতাস ও মৌসুমি বায়ুকে দায়ী করছেন।
তাঁদের মতে, গত আগস্ট থেকে পুবালি বাতাস অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী আচরণ করছে, যা মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে মিলে অতি ভারী বৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুবালি বাতাসের সঙ্গে ঘূর্ণি বাতাস মিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টি ঘটাচ্ছে। এর সঙ্গে উজান থেকে আসা ঢলের যোগে এই বছর রেকর্ড ৯ বার দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে।
কিছুদিন পরপর অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা ঢলে শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা শহর ডুবে গেছে। এর আগে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং লক্ষ্মীপুরও প্রবল বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। গত এক মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টি ও বন্যার কারণে অন্তত ২০টি ছোট শহর ও জেলা বিপর্যস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ বছরের বর্ষা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। বৃষ্টির পরিমাণও ৩০ শতাংশ বেশি হয়েছে, এবং বর্ষার মেয়াদও দীর্ঘায়িত হয়েছে। সাধারণত অক্টোবরের শুরুতেই বর্ষা বিদায় নেয়, তবে এবার তা দিন দিন আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষত আগস্ট থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর এবং চলমান অক্টোবরে বর্ষা তার আগ্রাসী রূপ বজায় রেখেছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা জানান, চলমান বৃষ্টি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষত রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রবল বর্ষা এবং ভারত থেকে আসা পানির কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি বন্যা হয়েছে। সিলেটে তিনবার, ফেনী-কুমিল্লায় তিনবার, তিস্তাপারে রংপুরে একবার, চট্টগ্রামে একবার, এবং সর্বশেষ শেরপুর ও নেত্রকোনায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহসহ ২০টি জেলা শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের চারটি জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত রয়েছে। শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও জামালপুরের নিম্নাঞ্চলের পর এবার চাঁদপুর ও মাদারীপুরসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতেও পানি জমে গেছে। অমাবস্যার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে এসব অঞ্চলের চরগুলো তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, সাধারণত গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকায় প্রতিবছর একাধিকবার বন্যা হয়। তবে এবার সেই এলাকাগুলোতে বন্যা ও বৃষ্টি তুলনামূলক কম হয়েছে, আর দেশের ছোট নদ-নদীর অববাহিকায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফেনী, শেরপুর, চাঁদপুর ও সিলেটের মতো ছোট ও মাঝারি জেলাগুলোতে এ কারণে বন্যার তীব্রতা বেড়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১১৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৫টিতে পানির উচ্চতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর ৩১টিতে পানি কমছে। রোববার (আজ) ময়মনসিংহ বিভাগের ভোগাই, কংস, সোমেশ্বরী ও জিঞ্জিরাম নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কথা রয়েছে, তবে এরপর ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করবে।